পোস্টার এবং ব্যানার পুরো শহরকে ছেয়ে ফেলে। নির্বাচন শেষ হওয়ার পরে ঢাকার দুই সিটি করপোরেশনকেই এই বিশাল জঞ্জাল পরিষ্কার করতে দুর্ভোগ পোহাতে হয়।
আধুনিক সমস্যার জন্য আধুনিক সমাধান প্রয়োজন- এবং কখনও কখনও সমস্যা সমাধানে যেসব পদক্ষেপ নেয়া হয় তা স্বতন্ত্রতার জন্য আলোড়ন সৃষ্টি করতে পারে।
সদ্য সমাপ্ত ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশন (ডিএসসিসি) এবং ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশন (ডিএনসিসি) নির্বাচনের পর বাংলাদেশের শিক্ষামূলক ভলান্টারি সংগঠন বিদ্যানন্দ এমনই এক অতুলনীয় পরিকল্পনা বাস্তবায়ন করেছে।
সংগঠনটি ব্যবহৃত ও অব্যবহৃত পোস্টার দিয়ে খাতা, পিভিসি ব্যানার থেকে স্কুল ব্যাগ এবং রেইনকোট তৈরি করে নির্বাচনী বর্জ্য কাজে লাগাচ্ছে। পাশাপাশি তারা লেমেনেটিং করা পোস্টার এবং ব্যানারের দড়ি প্যাকেজিংয়ের উদ্দেশ্যে ব্যবহার করছে।
বিদ্যানন্দের মুখপাত্র হাবিবুর রহমান ইউএনবিকে বলেন, ‘১ ফেব্রুয়ারির সিটি নির্বাচনের ঠিক পরেই, আমরা (বিদ্যানন্দ স্বেচ্ছাসেবীরা) মিরপুরের পল্লবী আর/এ প্রকল্পে যেখানে আমাদের অফিস রয়েছে সেখান থেকে ব্যবহৃত ও অব্যবহৃত পোস্টার এবং ব্যানার উভয়ই সংগ্রহ করতে শুরু করি।’
তিনি বলেন, ‘আমাদের প্রাথমিক পরিকল্পনা ছিল তিনটি এতিমখানা এবং এক হাজার পথ শিশুর জন্য এই পোস্টারগুলো ব্যবহার করে আগামী এক বছরের জন্য খাতা তৈরি করা। কাজ শুরু করার পরে, আমরা সবার কাছ থেকে ব্যাপক সাড়া পেয়েছি এবং এখন আমরা এই পোস্টারগুলো থেকে প্রায় এক লাখ খাতা তৈরি করার বিষয়ে ভাবছি। বুধবার আমরা তিন ট্রাক ভর্তি অব্যবহৃত পোস্টার পেয়েছি, প্রতিটি ট্রাকে ২.৫ থেকে ৩ টন ওজন বহন করা হয়।’
এমন উদ্যোগে মেয়রপ্রার্থী ও কাউন্সিলরদের কাছ থেকে পাওয়া সমর্থনের কথা উল্লেখ করে সম্রাট জানান যে প্রত্যেকে এই মহৎ কাজে আগ্রহের সাথে সহযোগিতা করছে।
‘বিশেষ করে আমরা ঢাকা উত্তরের নবনির্বাচিত মেয়র আতিকুল ইসলামের কাছ থেকে ব্যাপক সমর্থন পেয়েছি। তিনি আমাদের এই উদ্যোগের প্রশংসা করেন এবং এমন কাজে জড়িত থাকার প্রতিশ্রুতি দেন,’ ইউএনবিকে বলেন সম্রাট।
কীভাবে এই খাতা, ব্যাগ, রেইনকোট, কাগজের ছোট প্যাকেট, বিল স্লিপ ইত্যাদি তৈরি করা হচ্ছে? সম্রাট জানান যে প্রতিদিনি ২৫-৩০ জন স্বেচ্ছাসেবী এজন্য কাজ করে যাচ্ছেন।
দুজন সদস্যের সমন্বয়ে গঠিত ছোট দলগুলো প্রতিটি অঞ্চল থেকে পোস্টার এবং ব্যানার সংগ্রহ করছে।
‘আমাদের অফিসের পাশে বাসন্তি নামে একটি অলাভজনক পোশাক কারখানা রয়েছে, যেখানে ব্যাগ এবং রেইনকোট তৈরি হচ্ছে।’
এই উদ্যোগ ইতোমধ্যেই সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ভাইরাল হয়ে গেছে এবং প্রত্যেকেই এমন মহৎ কাজের প্রশংসা করছেন। ‘বর্জ্য পুনর্ব্যবহারের ক্ষেত্রে যদি কোনো নোবেল পুরষ্কার থাকত তবে আপনারা অবশ্যই এটির জন্য প্রাপ্য’ এমন প্রশংসাসূচক মন্তব্য প্রত্যেকের ফেসবুক পোস্টে দেখা গেছে।
স্বেচ্ছাসেবীদের সাহায্য এবং প্রচেষ্টায় পুরোপুরি চলমান, ফাউন্ডেশনটি অনেকের কাছে প্রশংসিত ধারণা ‘এক টাকায় আহার’ প্রকল্পের জন্য পরিচিত।
এই প্রকল্পে তারা ১২ বছরের কম বয়সী শিশু এবং ৬০ বছরের বেশি বয়সী বৃদ্ধদের ১ টাকার বিনিময়ে খাবার সরবরাহ করে।
এই স্বেচ্ছাসেবীদের বিশ্বাস, বর্জ্য পুনর্ব্যবহারযোগ্য প্রকল্পগুলোর মতো দুর্দান্ত উদ্যোগগুলো অবশ্যই পরিবেশ দূষণ এবং দারিদ্র্যকে আরও বৃহত্তর আকারে হ্রাস করতে পারে। এই উদ্যোগ অনুদানের মাধ্যমে সাহায্য করতে পারে।
বিস্তারিত তাদের ফেসবুক পেজ এবং https://bidyanondo.org/. এর মাধ্যমে জানা যাবে।